গল্প

আরও একটি বিয়ের গল্প

শৌভিক মুখোপাধ্যায় Feb 14, 2021 at 9:00 am গল্প

.....................

– সান্যাল!

– কী স্যার?

– তুমি কি জানো আমি শখে একটু আধটু জ্যোতিষ চর্চা করি?

– কই না তো!

– যদিও তোমার ভবিষ্যৎ বলার জন্যে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেই হয়। কেবিনের কাচ বড় স্বচ্ছ। তাও তোমার কপাল-লিখন দেখে বোঝা যাচ্ছে যে, সামনেই বিবাহ যোগ।

– উফ স্যার! না, এরকম কিছুই না।

– সান্যাল!

– তুমি কি এও জানো ঘটক হিসেবেও আমার সামান্য সুনাম আছে?

– ইয়ে এটা জানি। গেলবার আসানসোলে রুটিন ভিজিট করতে যাওয়ার সময় আপনার নাম করা মাত্রই ওখানকার হেড অফ দি অপারেশন, সি.মুখার্জি পেন্নাম ঠুকে, বিরিয়ানি আনিয়ে সে কী খাতির!

– শুধু বিরিয়ানিই খাওয়াল!

– না! না! বিরিয়ানি, চাঁপ, দোপেঁয়াজা, রায়তা, ফিরনি...

– থামো! হতচ্ছাড়া আমি গেলে লাউয়ের রস খাওয়ায়, আর অন্য কেউ গেলে...

– সে তো আপনার দুর্বল পিলে...

– খুব খই ফুটেছে মুখে। পরের বার আসানসোলে আমিই যাব। আর তুমি যদি যেতে চাও, আর্ধেক খাবার প্যাক করিয়ে নিয়ে আসবে। আমি স্পটে যাব না, হোটেলে থাকব।

– কদিন বাইরে থেকে ভালোই অনিয়ম করেছেন বুঝতে পারছি। ভালো থাকা আপনার ধাতে নেই!

আরও পড়ুন : লকডাউন / রোহন রায় 

– ...থাকতে দিচ্ছ কোথায়, এই অফিসেও বোধহয় আর বেশিদিন নেই। স্টক স্টেবল হয়ে গেছে, আবার ঘাড় ধাক্কা দিয়ে অন্য কোথাও ড্যামেজ কন্ট্রোলে পাঠাবে। সে যেতে হয়, যাব। কিন্তু দুঃখ নিয়ে যাব।

– কীসের দুঃখ স্যার!

– আর দুঃখ, জেনে শুনে ন্যাকা সাজছ! অসহ্য! বলতে গেলে এরকম করে করেই আরো দুঃখটা বাড়িয়ে দিচ্ছ!

– আমি আবার কী করলাম!

– ঝন্টুর দোকানে হঠাৎ পাওয়া গোলাপটার ব্যাপারে তদন্তে নামলে না যে...

– ইয়ে মানে স্যার ! আপনি ওইটা নিয়ে, এখনও...

– মাথা ঘামাচ্ছি হে... স্বার্থেই মাথা ঘামাচ্ছি। এই চত্বরে যদি আরো একটা থাকা খাওয়ার আস্তানা হয়ে যেত... হঠাৎ চলে-টলে এলে… জায়গাটা তো মন্দ নয়! নদী, পাহাড়, জঙ্গল, ৬০ টাকায় গোটা মুরগি, বিশ টাকায় মহুয়ার হাঁড়ি, পাঁচ টাকায় দু বান্ডিল বিড়ি, শালপাতার গন্ধটা যদিও একটু ইয়ে, তা সে ম্যানেজ হয়ে যাবে। না মানে ঘরে নয়, নাহয় কিরিতির চরে  বসে ... যাক গে, যা বলছিলাম, তদন্তের গতি ...

–  ও নিয়ে আর ভাবার কী আছে! সেদিন আমার জন্মদিন ছিল। ছোট করে সেলিব্রেটও করেছিলাম। ফেসবুকই যত নষ্টের গোড়া, এর আগে কেউ জানতও না। যেই অ্যাকাউন্ট চালু করেছি অমনি রিকুয়েস্টের ঢল নামল। তারপর নস্কর ফাঁস করে দিল। ভাগ্যিস আপনি ছিলেন, টাকা না পাঠিয়ে দিলে আর টাকিলা হত না, স্রেফ লেবু চা। ঝন্টুও তো ছিল। নির্ঘাত তাই পরের দিন...

– সান্যাল, তুমি কোন হনু হে? নাকি সমস্ত জেরক্সের টাকা খুচরোয় দাও যে ঝন্টু তোমায় ভুলতে পারবে না? অন্য কিছু দিলে নাহয় বুঝতাম, কিন্তু গোলাপ? তুমি গে?

– ধুস! কী যে বলেন!

– তাহলে?

– আরে স্যার ওটাই হবে। আর জানেনই তো ফুলই সবচেয়ে নিরাপদ উপহার। গোলাপের আর দাম কত? ১ টাকা/ ৫ টাকা, গেলবার ওর দোকান থেকে ৫০০ টাকার জেরক্স করালাম, এমন একজন খদ্দের, সেই ভালোবাসা থেকেই...

– সান্যাল, সব প্রশ্নের উত্তর আগে থেকেই তৈরি করে রাখলে কী হয় জানো তো?

– কী স্যার!

– নতুন সাজেশন দেখলেও চোখ কান বুজে থাকতে হয়! আমি এখানকার হেড অফ দ্য অপারেশন, আমার জন্মদিনে নিজে লেবু জল খেয়ে বাকিদের বিয়ারে চোবালাম, ঝন্টু বমি করে ভাসিয়ে রাজেনের খিস্তি খেল! সে বেচারাকে রাত জেগে বাথরুম পরিষ্কার করতে হয়েছিল সেদিন, কই আমাকে তো কয়েকটা লুজ এ-৪ পেজও দেয়নি। আর তোমাকে একেবারে গোলাপ ... তুমি কোন হরিদাস হে! দীনু বলছিল, গোটা সেকশনে ও সবথেকে বেশি গালাগাল তোমার কিউবিকল থেকেই শুনতে পায়... আহা লাজুক হয়ো না। গুছিয়েই নেমেছি, টপিকে এসো, নইলে বাধ্যত অনেক গোপন দুয়ার হাট করে খুলে দিতে হবে...

– স্যার...

– ঘড়ি দেখো না সান্যাল। টিফিন টাইম শুরু হয়ে গেছে আমি জানি। তুমিও আন্দাজ করতে পারছ নিশ্চয়, আমার মতো পেটরোগা রুগির কেবিনে লাজিজের কাবাব-পরোটা কার জন্যে সাজানো! দিনু বরং ওগুলো এবার গরম করে আনুক। আজ একটা হেস্তনেস্ত চাই!

– কীসের?

– ওরকম একটা রাংতা জড়ানো গোলাপের সম্ভাব্য প্রেরকের নাম কী কী হতে পারে...

– রাংতা তো নয়, ওটা অফিস প্যাডের একটা পাতা জড়িয়ে...

– হুম! এটাই আগে শিওর হওয়ার দরকার ছিল।

– মানে!

–  ঠিক লোকের থেকেই গোলাপটা পেয়েছ কি না সেটা না জানা অব্দি খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছিল হে...

– স্যার! আপনি...ই...ই

– কী করব বলো! ঘটকালি স্বভাবদোষে দাঁড়িয়ে গেছে। তোমার কোনও গুণমুগ্ধ যদি এখনো ফেসবুকে না ভরতি হয়, তাহলে তাকে বিলেটেড উইশের রাস্তা আমাকেই তো বাতলাতে হবে।

– দত্তদা!

– আহা!

– এটা ঠিক হল?

– আরে আমিও ঘাবড়ে ছিলাম, অফিস ট্যুরের মধ্যে তোমার জন্মদিন পড়বে কে জানত, তারপর কুর্চি ভ্যালিতে ইন্টারনেটও নেই, ভাগ্যিস একটা ফোন এল, আর আমিও পরামর্শ পাঠালাম এমন মাহেন্দ্রক্ষণ হাতছাড়া করা যাবে না একদমই। খালি এর মধ্যে অন্য কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসেছে কি না জানার দরকার ছিল। কিন্তু যে পাঠাল সে লজ্জায় আর কিছু বলেই না! বাধ্য হয়ে, মানিব্যাগ রোগা করে...

– অফিস প্যাডের আইডিয়াটা...

– ...আমার। এর চেয়ে ভালোভাবে বোঝানোর রাস্তা ছিল না। এই অফিসে একমাত্র হেডুদের নামেই প্যাড ছাপানো হয়, আর সেগুলো তাদের পি.এ-দের কাছেই রাখা থাকে। তুমিও বুঝতে পেরেছিলে, কিন্তু চেপে গেছ। তবে সে যে সাহস করে তোমার টেবিলে না রেখে হতভাগা ঝন্টুকে দূত করেছে এর জন্যে খেপে আছি। শালার মুখ বন্ধ রাখার জন্যে আরও ৫০০ টাকা বেরিয়ে গেছে আমার।

– দাদা!

– সান্যাল! আমার কিউবিকলের কাচ খুবই স্বচ্ছ।

– দাদা!

– তাহলে ভদ্রলোকের চুক্তি হয়েই যাক!

– কী...

– এর পর আমার নতুন অফিস থেকে কেউ এলে তুমি তাকে স্রেফ লাউয়ের রস খাওয়াবে।

– দাদা!

– ওই কথাই রইল তাহলে। আমার কেবিনের কাচ খুবই স্বচ্ছ সান্যাল। সে নিজেও এ কথা জানে, তবু এতবার প্যাসেজে পায়চারি করছে যখন, বুঝতে পারছি টেনশনে আছে। তাড়াতাড়ি সুখবরটা দাও। ও হ্যাঁ...

– কী স্যার!

– আহ! দাদা-ই ভালো ছিল। ওই ড্রয়ারটা খোলো যাও...

– তারপর...

– একটা গোলাপ আছে। এবার তোমার পালা।

....................................

[অলংকরণ : বিবস্বান দত্ত] 

#গল্প #রবিবারের গল্প #Story #Bengali Story #শৌভিক মুখোপাধ্যায় #সিলি পয়েন্ট #প্রেম দিবস #প্রেমের গল্প

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

54

Unique Visitors

177635