ব্যক্তিত্ব

ফাঁসির পর ভয়ে জেলেই বিপ্লবী গোপীনাথ সাহার শেষকৃত্য সেরেছিল সরকার

টিম সিলি পয়েন্ট Sep 4, 2022 at 4:20 pm ব্যক্তিত্ব

মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ফাঁসিকাঠে মৃত্যুবরণ করেন। সেই ফাঁসি জনমনে কী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে, তাই নিয়ে ভয়ে ছিল ব্রিটিশ সরকার। তাই ফাঁসির পর মরদেহ নিয়ে নেতাজির নেতৃত্বে নগর পরিক্রমার অনুমতি দেওয়া থাকলেও পুলিশ কারাগারের ভিতরেই তাঁর শেষকৃত্য করে দেয়। গোপীনাথ সাহা এমনই আলোড়ন ফেলে দিয়েছিলেন সে সময়। কিন্তু ফাঁসির মঞ্চে জীবনের জয়গান গেয়ে যাওয়া এই মানুষটির নাম প্রথম সারির বাঙালি বিপ্লবীদের সঙ্গে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হয় না আজও।

১৯০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বরানগরের পঞ্চাননতলায় তাঁর জন্ম । শ্রীরামপুরের ক্ষেত্রমোহন শাহ স্ট্রিটে আদি বাড়ি হলেও, কলকাতায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন । কিশোর বয়সেই মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে শুরু হওয়া অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে স্কুল ত্যাগ করেন। প্রথম জীবনে অহিংস আন্দোলনের পথে থাকলেও অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসকের একের পর এক দমনমূলক ঘটনা গোপীনাথকে সশস্ত্র সংগ্রামের পথে ঠেলে দেয় । সশস্ত্র বিপ্লবের পথে তাঁকে অনুপ্রাণিত করেন হুগলি বিদ্যামন্দিরের শিক্ষক জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ। 

কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার চার্লস টেগার্টের অত্যাচারের মাত্রা সেইসময় সীমা ছাড়াচ্ছিল। বিপ্লবীদের দমনের জন্য একের পর এক স্বাধীনতা সংগ্রামীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল । গ্রেপ্তার হন গোপীনাথের মাস্টারমশাই জ্যোতিষচন্দ্রও। টেগার্টের দমননীতিতে এমনিতেই ক্ষুব্ধ ছিলেন গোপীনাথ, তার উপর মাস্টারমশাইয়ের গ্রেপ্তারি কিশোর গোপীনাথের বিপ্লবী-জীবন পালটে দেয় । টেগার্ট-হত্যার সংকল্প গ্রহণ করেন তিনি। প্রায়ই তিনি সহ-বিপ্লবীদের বলতেন, স্বাধীনতার শত্রু টেগার্টের হাত থেকে ভারতমাতাকে মুক্তি দিতেই তাঁর পৃথিবীতে আসা। 

পরিকল্পনামাফিক বিভিন্ন জায়গায় টেগার্টকে অনুসরণ করা শুরু করে দেন গোপীনাথ । কখনও কিড স্ট্রিটে, তো কখনও টেগার্টের বাংলোর পাশে নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে তাঁকে লক্ষ্য রাখা। গাড়িতে বা হেঁটে যেভাবেই টেগার্ট যেতেন, তাঁর গতিবিধি লক্ষ্য রাখতেন গোপীনাথ । তবে টেগার্টের খুব কাছে যাওয়াও সম্ভব ছিল না । কারণ, আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় রাজসাক্ষী নিত্যগোপাল পুলিশের কাছে গোপীনাথের দৈহিক বিবরণ দিয়েছিল। কাজেই, টেগার্টের খুব  কাছে গেলে ধরা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল । আবার ভালো করে চিনে না রাখলেই নয় । লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে । তাই ছদ্মবেশে টেগার্টের কাছে পৌঁছে গিয়ে তাঁর মুখের বিবরণ মনে গেঁথে নেন গোপীনাথ । 

১৯২৪ সালের ১২ জানুয়ারি। কিড স্ট্রিটে নিজের বাংলো থেকে প্রত্যহ ময়দানে প্রাতঃভ্রমণে যেতেন টেগার্ট। এই সময়টায় দেহরক্ষী থাকত না বলে তাঁকে হত্যা করার জন্য এই সময়টিই বেছে নিয়েছিলেন গোপীনাথ। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাহেবকে দেখে গুলি চালান গোপীনাথ। এরপর সেখান থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যান। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন টেগার্ট  নয়, তাঁর গুলিতে নিহত হয়েছেন কিলবার্ন কম্পানির কর্মকর্তা আর্নেস্ট ডে। মর্মাহত হয়ে পড়েন গোপীনাথ। 

এই মামলায় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের পরামর্শে গোপীনাথকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন বিখ্যাত উকিলরা। অবশ্য তাতে শেষরক্ষা হয়নি। ফাঁসির হুকুম হয়। টেগার্টকে হত্যার চেষ্টার পরিকল্পনায় আর কারা জড়িত তা জানাননি গোপীনাথ ।

আরও পড়ুন: বাংলার ফুটবলে প্রথম 'স্কাউট' : ফুটবলার গড়ার কারিগর দুখীরাম মজুমদার

১ মার্চ প্রেসিডেন্সি জেলে হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুবরণ করেছিলেন গোপীনাথ। তাঁর ফাঁসিতে ক্ষোভের আঁচ পাচ্ছিল ব্রিটিশ শাসক। শোনা যায়, ফাঁসির পর নেতাজি গোপীনাথের উত্তরীয় জোগাড় করেন । পরে তা মাথায় জড়িয়ে হরিশ পার্কে মিছিল করেন। পরদিন নেতাজিকে গ্রেপ্তার করেছিল ইংরেজ সরকার। নেতাজি যাঁকে ভুলতে পারেননি, বাঙালি তাঁকে ততটা সম্মান দিল কি? শ্রীরামপুরবাসী গোপীনাথের কাহিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন, কিন্তু বৃহত্তর বাঙালি কি সেভাবে স্মরণ করেন তাঁকে?   




#বিপ্লবী #গোপীনাথ সাহা #সশস্ত্র সংগ্রাম #স্বাধীনতা #ফাঁসি #শ্রীরামপুর #ব্যক্তিত্ব #টিম সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

21

Unique Visitors

219136