পরিবেশ ও প্রাণচক্র

‘সাস্টেইনেবল্‌ হোম’ : প্রাক্তন নৌ-কমান্ডারের অনন্য কীর্তি

অলর্ক বড়াল Feb 27, 2022 at 7:23 am পরিবেশ ও প্রাণচক্র

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে পরিবেশগত ‘সাস্টেইনেবিলিটি’র ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, সম্পদ সংরক্ষণ, পুনর্ব্যবহারের ধারণার প্রচার চলছে বিশ্বের সর্বত্রই। পৃথিবীর বুকে কয়লা, খনিজ তেল প্রভৃতি অপুনর্ভব শক্তিগুলির ভাণ্ডার ক্রমশ ফুরিয়ে আসার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই চিন্তিত, নানা দেশে গবেষণা চলছে বিকল্প শক্তি-উৎস ও শক্তি-উৎপাদনের প্রক্রিয়ার সন্ধানে। পাশাপাশি খোঁজ চলছে পুনরুৎপাদনযোগ্য শক্তি, সম্পদের ‘রিসাইক্লিং’-এর ধারণা ও তার ব্যবহারিক প্রয়োগের। এই মর্মেই উঠে আসছে ‘সাস্টেইনেবল্‌ ডেভেলপমেন্ট’ ও ‘সাস্টেইনেবল্‌ লিভিং’-এর মতো ধারণাগুলি। মানবজীবনে বর্তমানে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দুই সম্পদ হল জল এবং বিদ্যুৎ; আর উভয়েরই ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছে না পৃথিবীতে এদের সম্পদভান্ডার, কারণ এই দুই সম্পদের অপচয়ের পরিমাণও অনেক বেশি। অনেক শহরাঞ্চলে তাই মাঝেমধ্যেই জল ও বিদ্যুতের অভাব পরিলক্ষিত হয়। আর ঠিক এই জায়গায়তেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ‘রিসাইক্লিং’, ‘কন্সার্ভেশন’ ও ‘রিইউজ’-এর মতো শব্দবন্ধগুলি।

বেঙ্গালুরু শহরে নিজের বাড়িতে এই ধারণাগুলির এক অসাধারণ ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন প্রাক্তন নৌ-কমান্ডার গণপতি সুব্রহ্মণম। তাঁর বাড়ি এখন একটি ‘সাস্টেইনেবল্‌ হোম’-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ যেখানে আছে রেইনওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেম, সোলার প্যানেল এবং বায়ো-কম্পোস্টিংয়ের মতন ব্যবস্থা। তাঁর বাড়ির প্রক্রিয়াকরণ এমনই যে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎশক্তি সেখানেই উৎপাদিত হয়, পাওয়ার গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহের দরকার হয় না; পাশাপাশি জলের সম্পূর্ণ চাহিদাও মেটে অত্যন্ত কুশলী জল সংরক্ষণ ব্যবস্থার সাহায্যে। 

২০১৬-তে অবসরের পর গণপতি সপরিবারে বেঙ্গালুরু শহরে চলে আসেন এবং ‘সাস্টেইনেবল্‌ লিভিং’ এর পথ অনুসরণের সিদ্ধান্ত নেন। বেঙ্গালুরু শহরে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ১০০০ মিলিমিটার যার থেকে প্রায় ৭৫০০০ লিটার বৃষ্টির জল সংগ্রহ করা সম্ভব। তাঁর বাড়িতে ছাদের জলনিকাশি ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে বৃষ্টির জলকে পাইপের মাধ্যমে পরিশ্রুতকরণ ব্যবস্থার দ্বারা একটি ট্যাঙ্কে জমা করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় তাঁকে কাবেরী ওয়াটার সাপ্লাইয়ের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় না। এই ব্যবস্থায় প্রায় পাঁচ মাস ব্যবহারযোগ্য জল তিনি সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন, আর এতে খরচও পড়ে ১০০০০ টাকার কম।

রেইনওয়াটার হারভেস্টিং সিস্টেমের পাশাপাশি তাঁর বাড়িতে তিনি ‘গ্রে-ওয়াটার হারভেস্টিং’-এরও একটি সুব্যবস্থা করেছেন। গ্রে-ওয়াটার হল স্নান ও কাপড়কাচার কাজে ব্যবহারের পরবর্তী জল। পৃথক পাইপলাইন, পরিশ্রুতকরণ ও ট্যাঙ্ক-ব্যবস্থার দ্বারা এই জলকেও ধরে রেখে পরবর্তী সময়ে গার্ডেনিং, শৌচকর্ম ইত্যাদি নানা কাজে পুনঃপ্রয়োগ করা সম্ভব। ফলে প্রায় ২৫ শতাংশ ‘ফ্রেশ-ওয়াটার’ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণপতি; পাশাপাশি তাঁর কথায় এর দ্বারা সংরক্ষিত বৃষ্টির জলকে আরও এক মাস বেশি ব্যবহার করা যাবে। 

আরও পড়ুন : অনগ্রসর এলাকার পড়ুয়ারা শিখছে রোবোটিক্সের কৌশল : সৌজন্যে ‘রোবোটেক্স ইন্ডিয়া’ / সবর্ণা চট্টোপাধ্যায়

‘সোলার রুফ টপ ফটোভল্টেইক সিস্টেম’ (SRTPV) এর প্রয়োগে বাড়ির ছাদে নিজস্ব শক্তি উৎপাদন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থাও গড়ে তুলেছেন গণপতি সুব্রহ্মণম। ১ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার প্যানেল প্রায় ৭০ বর্গফুট জায়গা দখল করে। আরও ৪ বর্গফুট জায়গা দরকার হয় ব্যাটারি ও আনুষাঙ্গিক যন্ত্রপাতির জন্য যা সহজেই যেকোনো দেওয়ালে ইন্সটলযোগ্য। গণপতির কথায় তাঁর বাড়ির ছাদের এই ৪ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার প্যানেলগুলি থেকে দৈনিক ১৬ কিলোওয়াট শক্তি উৎপাদন হয় এবং এই শক্তির ব্যবহারে প্রায় ৫০ শতাংশ শক্তির অপচয়ও তিনি কমাতে পেরেছেন। উৎপাদিত ও অব্যবহৃত শক্তিকে প্রয়োজনে পাওয়ার গ্রিডেও পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব বলে মত গণপতির। এই ধরনের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে খরচ প্রতি কিলোওয়াট শক্তিতে ১ লক্ষ টাকা, তবে এর প্রয়োগে লোডশেডিং, পাওয়ার গ্রিডের সমস্যা ইত্যাদি থেকে চিরতরে মুক্তি পেয়েছেন, পাশাপাশি ২৪X৭ বাড়িতে বিদ্যুৎ পরিষেবা পাওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন এই নৌ-কর্মী।

আরও পড়ুন : মহিলাদের উদ্যোগে বিদ্যুৎহীন গ্রাম এখন 'SOLAR VILLAGE': মহারাষ্ট্রের সাতারায় তৈরি হল দৃষ্টান্ত

‘ব্যাঙ্গালোর ওয়াটার ওয়ারিয়রস্‌’ নামক এক দলের সদস্য গণপতি তাঁর বন্ধুবান্ধব, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সাস্টেইনেবল্‌ লাইফস্টাইল নিয়ে আলাপ-আলোচনা করে থাকেন প্রতিনিয়ত। করোনা অতিমারির পূর্বে তিনি স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিশু ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে সাস্টেইনেবিলিটির ধারণা নিয়ে প্রচার চালাতেন। তাঁর মতে এই অতিমারির সময়টা আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, আমরা বাড়িতে থেকে কীভাবে আমাদের কার্বন ফুটপ্রিন্টকে কমিয়ে এনে পরিবেশ ও পৃথিবীকে সুন্দর ও সুরক্ষিত করে তুলতে পারি সেটাই হওয়া উচিত আমাদের লক্ষ্য। তাঁর এই মডেল সাস্টেইনেবল্‌ হোম সহজেই ৩০ × ৪০ আকৃতির যেকোনো বাড়ি বা কন্সট্রাকশন সাইটে প্রয়োগ করা সম্ভব। তাঁর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অনন্য এবং এই প্রচেষ্টা যে ভবিষ্যতে আরও নিত্যনতুন সাস্টেইনেবল্‌ উদ্যোগের অনুপ্রেরণা ও দিশারি হবে একথা বলাই বাহুল্য।   

*************

#silly point #sustainability #sustainable living #rainwater harvesting #greywater harvesting #অলর্ক বড়াল #ভালো খবর # সিলি পয়েন্ট #বাংলা পোর্টাল

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

74

Unique Visitors

214955