খেলা

স্মৃতির রিজার্ভ বেঞ্চ ( পঞ্চম কিস্তি) : পঙ্কজ গুপ্ত

অলর্ক বড়াল Aug 8, 2020 at 5:30 am খেলা

আধুনিক দুনিয়ায় খেলা বরাবরই সবচেয়ে গ্ল্যামারাস জিনিসগুলোর একটা। সব খেলা নয় অবশ্যই। এ দুনিয়ায় কোনও কোনও খেলা ধর্মের সমার্থক হয়ে যায়, আর কোনও কোনও খেলার কুশীলবেরা স্বীকৃতি না পেয়েই চলে যান - চুপিচুপি, একা একা। তবে স্মৃতি জিনিসটা বড় প্রতারক। আজকের গ্ল্যামার নিমেষে ফিকে হয়ে যায় আগামীর ধুলো পড়ে। একটু পুরোনো হয়ে গেলেই প্রায় সব স্মৃতি এক পংক্তিতে বসে যায়। ভুস করে তাদের মুখে ধোঁয়া ছেড়ে এগিয়ে যায় আমাদের বাস। স্মৃতি খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে রিনিউ করতে করতে ডিলিট করতে থাকে পুরোনো জিনিসপত্র। এই তথ্যবিপ্লবের যুগে কিছুদিন আগের ঘটনাই যেন মনে হয় কত শতাব্দী পিছনে ফেলে আসা - সেপিয়া টোনে ছোপানো মনকেমন। বেহালার আগেও তো অনেক গর্ব করার মতো গল্প ছিল বাঙালির খেলায়। পঙ্কজ রায়েরও আগে ছিল কিছু গল্প। এমনকী কিছু গল্প ছিল সেই সাদা- কালো যুগের গোবরবাবুরও আগে। আমরা খবর রাখি না। কেমন হয় যদি ধুলো- টুলো ঝেড়ে তুলে আনা যায় পুরোনো দিনের এমন কয়েকজন বিস্মৃতপ্রায় ক্রীড়াব্যক্তিত্বের গল্প? সিলি পয়েন্টের এই নতুন সিরিজে সেই চেষ্টাই ধরা থাকল, খেলা-প্রেমীদের জন্য। আজ পঞ্চম কিস্তিতে হকি খেলোয়াড় ও ক্রীড়া - প্রশাসক পঙ্কজ গুপ্ত।

পঙ্কজ কুমার গুপ্ত ছিলেন ভারতীয় ক্রীড়া প্রশাসকদের অন্যতম পূর্বসূরি। তিনি পেশাদার হকি খেলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেখানে বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রশিক্ষক ও প্রশাসক – দুইয়েরই ভূমিকা পালন করেছিলেন। হকির পাশাপাশি তিনি ফুটবল ও ক্রিকেটেও প্রশাসকদের দায়িত্ব সামলেছেন। হকি খেলায় তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে ‘মিস্টার হকি’ নামে অভিহিত করা হয়।

ইন্ডিয়ান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে স্পোর্টিং ইউনিয়ন ক্লাবের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর প্রশাসক জীবনের শুভারম্ভ ঘটে। ১৯২৪ সালে জাভা সফরকারী আইএফএ দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব তাঁর ওপরেই ন্যস্ত করা হয়েছিল। ১৯৩২-এর লস এঞ্জেলস অলিম্পিক থেকে শুরু করে পরবর্তীকালে ইউরোপ ও আমেরিকায় নানান প্রতিযোগিতায় তিনি ভারতের বিবিধ ক্রীড়া-বিভাগীয় দলের কোচ বা ম্যানেজারের ভূমিকা পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি দুবার বিশ্ব ফুটবল সম্মেলনে ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সোভিয়েত সফরে যাওয়া ভারতীয় ফুটবল দলে ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৪৬ ও ১৯৫২-তে ইংল্যান্ড ও ১৯৪৭-৪৮–এর অস্ট্রেলিয়া সফরকারী ভারতীয় ক্রিকেট দলের ম্যানেজারও তিনিই ছিলেন।

কিংবদন্তী হকি খেলোয়াড় ধ্যানচাঁদের প্রথম কোচ ছিলেন এই বঙ্গসন্তান পঙ্কজ গুপ্ত। মনে করা হয় ধ্যানচাঁদকে (পূর্বনাম ধ্যান সিং) ‘চাঁদ’ উপাধি পঙ্কজ গুপ্তই দিয়েছিলেন। ১৯৩৬-এর বার্লিন অলিম্পিকে পঙ্কজ গুপ্ত এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটান যার বর্ণনা ধ্যানচাঁদ তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থে করেছেন। তিনি বলেন, “ট্রায়াল ম্যাচে জার্মানির কাছে হারের পর আবার যখন আমরা ফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হলাম তখন আমরা সকলেই সেই দিনের ফলাফলের ব্যাপারে চিন্তান্বিত ছিলাম। এর পূর্বে কখনোই আমরা নিজেদের যোগ্যতার ওপর অবিশ্বাস করিনি। এমন সময়ে হঠাৎই পঙ্কজ গুপ্ত কংগ্রেসের তেরঙা পতাকা বার করে আনলেন। আমরা সেই পতাকাকে ভক্তিভরে স্যালুট জানিয়ে, প্রার্থনা করলাম ও মার্চ করে মাঠে নেমে পড়লাম”। ধ্যানচাঁদ এই ম্যাচে মোট সাতটি গোল করেছিলেন।

পঙ্কজ গুপ্ত ১৯৩৬ থেকে একটানা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বেঙ্গল হকি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক ছিলেন। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন প্রতিষ্ঠায় তিনি প্রত্যক্ষ ভূমিকা নেন এবং এর জন্মলগ্নে সংস্থাটির কোষাধ্যক্ষ পদে আসীন ছিলেন এবং পরবর্তীতে সভাপতিও হয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে ভারতের তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাঁকে ক্রীড়া প্রশাসনে অবদানের জন্য ‘অর্ডার অফ দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’-এর সদস্যরূপে স্বীকৃতি দেয়।



[কভার : অর্পণ দাস।]

#খেলা #নিবন্ধ সিরিজ #স্মৃতির রিজার্ভ বেঞ্চ

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

41

Unique Visitors

181945