ব্যক্তিত্ব

বাংলার ফুটবলে প্রথম 'স্কাউট' : ফুটবলার গড়ার কারিগর দুখীরাম মজুমদার

মৃণালিনী ঘোষাল Aug 24, 2022 at 4:50 pm ব্যক্তিত্ব

আসল নাম উমেশচন্দ্র মজুমদার। তবে 'দুখীরামবাবু' নামেই ময়দানে সুপরিচিত ছিলেন। ভারতীয় তথা কলকাতা ময়দানের ফুটবলের কিংবদন্তী কোচ তিনি। বহু যশস্বী ফুটবলার কার্যত তাঁর হাতেই 'তৈরি'। শিবদাস ভাদুড়ী, বিজয়দাস ভাদুড়ী, সামাদ, ছোনে মজুমদার, সুরেন ঠাকুর, পূর্ণ দাস, সূর্য চক্রবর্তী, ফজলুর রহমান, করুণা ভট্টাচার্য,হাবলা ভট্টাচার্য, ছানা গুহ, বীরেন ঘোষ, মতিয়ার রহমান, সুবল ঘোষের মতো নামকরা ফুটবলাররা ছিলেন তাঁর ছাত্র। এঁদের মধ্যে প্রথম দুজন ১৯১১ সালের আইএফএ শিল্ড-জয়ী মোহনবাগান দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। পরবর্তীকালে অনেকে দুখীরামবাবুকে বাংলার ময়দানের প্রাণপুরুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন। অথচ তাঁর পূর্বসূরী নগেন্দ্রপ্রসাদ সর্বাধিকারীর নাম অনেকে জানলেও তিনি আজ অনেকটাই বিস্মৃতির অন্তরালে।

১৮৭৫ সালে তাঁর জন্ম। নিজে নামী সেন্টার-হাফ ছিলেন। তবে কোচিং-জীবন অনেক বেশি উজ্জ্বল। আধুনিক ফুটবলে যাঁকে স্কাউট (Scout) বলে, বাংলার ফুটবলে সে ধারণার অগ্রদূত তাঁকেই বলা চলে। গ্রাম-মফস্বলের নানা কোণ থেকে খুঁজে আনতেন কমবয়সী প্রতিভা, তারপর তাদের ঘষেমেজে করে তুলতেন দুর্দান্ত খেলোয়াড়। কিশোর বয়সে শ্যামপুকুর তেলিপাড়ার মাঠে মাঠে প্রতিষ্ঠা করেন লুনার ক্লাব। পড়ে মোহনবাগান ভিলায় তৈরি করেন স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। বুট পরা নিয়ে মতভেদ হলে সেখান থেকে চলে এসে শ্যামপুকুরে লাহাদের মাঠে প্রতিষ্ঠা করেন এরিয়ানস ক্লাব। সেটা ১৮৮৪ সাল। এই ক্লাবই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। পরবর্তীকালে এই ক্লাবের শাখা হিসেবেই তৈরি করেছিলেন কোচিং সেন্টার। 'স্যার' উপাধি পেয়েছিলেন। তাঁর কোচিং সেন্টারের নাম ছিল 'স্যার দুখীরাম কোচিং সেন্টার'। শুধু ফুটবলের তালিম দেওয়াই নয়, নিজের ছাত্রদের তিনি সবরকমভাবে সামলে রাখতেন। সে সময়ের অগ্নিগর্ভ সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতিতে সামাদকে সুরক্ষিত রাখতে তিনি তাঁকে 'সন্তোষ' নাম দিয়ে একটি হিন্দু পরিবারে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। একসময় টানা বেশ কয়েকদিন প্রায় ১৫ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে অতিক্রম করতেন হরিদাস নামে এক যক্ষ্মা-আক্রান্ত ছাত্রের বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দিতে। কোচ হিসেবে 'বড় প্লেয়ার' তৈরি করতে সে সময় দুখীরাম ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর স্কাউটিং-এর দিকে গোপনে নজর রাখত মোহনবাগান ক্লাব। তাঁর নেতৃত্বে এরিয়ান ক্লাব হয়ে উঠেছিল প্রতিভা তৈরির আঁতুড়ঘর। অল্প পুঁজি নিয়েই এরিয়ান সে সময় মোহনবাগান ছাড়াও টক্কর দিয়েছে ডালহৌসি সহ কলকাতার অন্যান্য ব্রিটিশ ক্লাবগুলোকেও।  দুখীরামবাবুর পরে তাঁর ভাইপো ও শিষ্য ছোনে মজুমদার তাঁর কোচিং সেন্টারের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। 

আরও পড়ুন: ক্যামেরাকে সঙ্গী করে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ রক্ষার লড়াই : চিত্রনির্মাতা মাইক পাণ্ডে/ টিম সিলি পয়েন্ট

উনিশ শতকের সেই ক্রান্তিলগ্নে, ফুটবল যখন পরাধীন একটি জাতির প্রতিরোধের ভাষা হয়ে উঠছে, সে সময় বাংলার ফুটবলের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন দুখীরামবাবু। তিনি ফুটবল খেলা সম্পর্কে ইংরেজিতে একটি বইও লিখেছিলেন। এখন সেটি দুষ্প্রাপ্য। পশ্চিমবঙ্গে আন্তঃ-জেলা ফুটবল প্রতিযোগিতায় বিজয়ী জেলাকে একসময় তাঁর নামাঙ্কিত 'মজুমদার ট্রফি' দেওয়া হত। 


#বাংলা #ফুটবল #স্কাউট #ব্যক্তিত্ব #দুখীরাম মজুমদার #সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

27

Unique Visitors

215896