ভালো খবর

বইপাঠেই মুক্তিলাভ : পড়াশোনা করলে সাজার মেয়াদ কমছে ব্রাজিলের কারাগারে

অলর্ক বড়াল May 21, 2021 at 5:32 am ভালো খবর

অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভেদ আজ অত্যন্ত প্রকট। আর এই বিভেদের কারণে বিগত কয়েক দশকে এইসব দেশে ‘ক্রাইম রেট’ ক্রমবর্ধমান। অবস্থা এমনই যে তৃতীয় বিশ্বের দেশ ব্রাজিলে বিগত ১৫ বছরে জেলবন্দীদের সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে; যেখানে গোটা দেশে বন্দী-ধারণক্ষমতা ২ লক্ষ, সেখানে সরকারি তথ্যমতে বর্তমানে মোট বন্দীর সংখ্যাটা ৫ লক্ষেরও বেশি। আর এহেন ‘ওভারপপুলেশন’-এর সুযোগ নিয়ে সহজেই রমরমিয়ে চলছে মানবাধিকার লঙ্ঘন - জেলের মধ্যেই দুর্নীতি ও ড্রাগ-ট্রাফিকিংয়ের মতো অসামাজিক কাজকর্ম, শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই জেলের মধ্যেই ‘গ্যাং-ওয়ারফেয়ার’-এ প্রাণ গেছে ১৩০ জন বন্দীর।

সংশোধনপন্থায় বিশ্বাসী আধুনিক সমাজব্যবস্থায় মানুষ চিহ্নিত হয় ‘হিউম্যান রিসোর্স’ শব্দবন্ধে। তাই আজকাল ‘জেল’ শব্দের পরিবর্তে প্রয়োগ হয় ‘সংশোধনাগার’ শব্দটি। আর প্রশাসনের সর্বস্তরে চেষ্টা চলে সাজাপ্রাপ্তদের নানা উপায়ে ‘সংশোধন’ করে সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার, যাতে আরও বেশি সংখ্যক মানুষকে সমাজোপযোগী নানা কাজে যুক্ত করা যায়। তাই সাজাপ্রাপ্তদের জন্য সরকারী উদ্যোগে ‘সোশ্যাল আওয়ারস্‌’-এর ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, পাশাপাশি রয়েছে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে বন্দীদের নিয়ে নাটক আয়োজন কিংবা ‘প্রিসনারস ফুটবল ওয়ার্ল্ড কাপ’। উদ্দেশ্য একটাই - বন্দীদের সংশোধনের মাধ্যমে শাস্তির মেয়াদ কমিয়ে তাদের সমাজের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনা। ব্রাজিল এ ব্যাপারে একটি অভিনব ও অত্যন্ত আকর্ষণীয় পন্থা অবলম্বন করেছে, যা গোটা বিশ্বের নজর কেড়ে নিয়েছে।

ব্রাজিলের ‘কাসা দে কাস্তোদিয়া দে পিরাকোয়ারা’ ও আরও তিনটি ‘ফেডারাল প্রিসন’-এ বন্দীরা নিজেদের শাস্তির মেয়াদ কমানোর সুযোগ পাচ্ছেন বই পড়ে। পুরো উদ্যোগটি বেশ সুচিন্তিত ও সুনিয়ন্ত্রিত। ২০১২ সালে শুরু হওয়া এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে ‘রিডেম্পশন থ্রু রিডিং’। এর সুবাদে এক বছরে একজন বন্দী সর্বমোট ১২টি বই পড়ে তাঁর শাস্তির সময়কাল থেকে বইপ্রতি ৪ দিন ও সর্বাধিক ৪৮ দিন কমাতে পারছেন। শুধু তাই নয়, প্রতিটি বই পড়ার জন্য তাঁদের বরাদ্দ একমাস সময়ের পর সকলকেই একটি করে প্রবন্ধ লিখে জমা দিতে হচ্ছে। যে বইটি তাঁরা পড়ছেন তার মূল বিষয়, প্রিয় চরিত্র, ভাষা ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ সেখানে তুলে ধরতে হচ্ছে। আর এই প্রক্রিয়াটি হচ্ছে আমাদের চিরাচরিত কাগজ-কলমের পরীক্ষাপদ্ধতির মত করেই।

বন্দীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু বই এবং বিষয় নির্ধারিত করা হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল এবং বিশ্বসাহিত্যের নানা ক্লাসিকস্‌, দর্শন, বিজ্ঞানবিষয়ক বইপত্র। ভিক্টর উগো-র ‘লে মিজেরাবল’, হেমিংওয়ে-র ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সী’, মার্গারেট মিচেল-র ‘গন্‌ উইথ দ্য উইন্ড’ বন্দীদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়। পাশাপাশি নিরক্ষর বা স্বল্প অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন বন্দীদের জন্য রয়েছে শিশুপাঠ্য বইপত্রের আয়োজন। ফলে উত্তরোত্তর এই প্রোগ্রামের জনপ্রিয়তাও বাড়ছে। ব্রাজিলের প্রশাসন ও আইনবিভাগের অনেকেই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। এই জেলবন্দীদের জন্য বইপ্রদান কর্মসূচির আয়োজক সাও পাওলো শহরের আইনজীবী আন্দ্রে কেহদি অত্যন্ত আশাবাদী যে এই উদ্যোগের ফলে অনেক সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি এক নতুন, বিস্তৃত জীবনদৃষ্টি নিয়ে সমাজের মূলধারায় ফিরতে পারবে। একইরকম আশাবাদী পিরাকোয়ারা ফেডারাল প্রিসনে বন্দীদের শিক্ষাদানের দায়িত্বে থাকা মারিলদা দে পওলা সোয়ারেস-ও।

অবশ্য উদ্যোগটিকে কেন্দ্র করে বেশকিছু বিতর্ক এবং প্রশ্নও উঠেছে। বিতর্ক দানা বেঁধেছে এই উদ্যোগের বাস্তবায়নকে ঘিরে, যেখানে অনেকেই মনে করছেন যে বাস্তবে এই পুরো প্রোগ্রামটি ব্রাজিলের অকার্যকরী ফৌজদারি ব্যবস্থার ওপরে চকচকে তাপ্পিমাত্র। তবে এই উদ্যোগের সাম্প্রতিক সাফল্যের দিকগুলি এত উজ্জ্বল যে সংশ্লিষ্ট মহল এই বিষয়ে খুবই আশাবাদী। বন্দীদের মধ্যে বই পাঠ করে আত্মসংশোধন ও মুক্তির প্রবল ইচ্ছা প্রশাসনকে আরও উৎসাহিত ও উদ্যোগী করেছে। ব্রাজিল গোটা বিশ্বকে ফুটবল ভালোবাসতে শিখিয়েছে। ব্রাজিলের প্রশাসনের এই অভিনব উদ্যোগ কি পারবে অন্যান্য দেশকে অনুপ্রাণিত করতে?

আরও পড়ুন : গাছের গায়ে যথেচ্ছ পেরেক আর ব্যানার : ক্ষত সারাচ্ছেন ওয়াহিদ সরদার / টিম সিলি পয়েন্ট 

........................................

তথ্যসূত্র : ১) www.huffpost.com, ২) www.telegraph.co.uk 

#সিলি পয়েন্ট #Web Portal #REDEMPTION THROUGH READING #Brazil Prisons #ব্রাজিল #কারাগার #সংশোধনাগার #ভালো খবর #ফিচার #অলর্ক বড়াল

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

18

Unique Visitors

214980