নিতান্তই সহজ সরল : মফঃস্বলের অনাবিল দিনলিপি
.................
ছবি : নিতান্তই সহজ সরল
পরিচালক : সত্রাবিত পাল
কাহিনি : সত্রাবিত পাল, কমলেশ রায়
চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনা : উত্তরণ দে
প্রযোজনা : নিমাই শাসমল
পরিবেশনা : রিফ্লেকশন মিডিয়া
অভিনয় : অমিত সাহা
এ এক মফস্বলী অনাবিল স্বপ্নের গল্প। সেই স্বপ্ন, যা কোনওদিন পূরণ হয় না। একটা স্বপ্নের মতো স্বপ্ন, যা ছোঁয়া হয়ে ওঠে না কোনওদিন। ছবির এই মূল প্রতিপাদ্য লুকিয়ে আছে ছবির শেষে, যেখানে ওই বেআক্কেলে বেলুনওয়ালাকে দেখতে পাই, যিনি বেলুন বিক্রি না হলে সেগুলো সব আকাশে উড়িয়ে দেন। এমনিই। গ্রামবাংলার ধানক্ষেত, আবছা আলপথের ধার থেকে লোকগীতির মেঠো সুরের হাত ধরে একরাশ বেলুন আকাশে পাড়ি জমায়। সাদাকালো এই ছায়াছবির ক্যানভাসে প্রত্যেকটা বেলুন রঙিন। আর এখানেই লেখক-পরিচালক সত্রাবিত পাল এক রূপকথায় উন্নীত করেন ছবিটিকে। যেখানে কোনো রূপকথাচিত গ্র্যাঞ্জার নেই। আমাদের ফেলে আসা ছেলেবেলার দিনগুলোর মতই তাড়াহীন; দুধরুটি, জলমুড়ি আর পঁচিশ পয়সার পেপসির মতোই আড়ম্বরহীন। এতকিছু পেয়েও তাই তো বারবার ওখানে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে।
খুব অবধারিতভাবেই এই ছবির মূল চরিত্র তাই এক পেপসি বিক্রেতা। মুখচোরা চরিত্র সেলুলয়েডে ফুটিয়ে তোলা মুখের কথা নয়। অমিত সাহা ছাড়া এই ধরনের চরিত্র কে-ই বা বাঙ্ময় করতে পারেন! এরা খেটে খাওয়া, না হয় খুব অলস মানুষ, এরা কথা কম বলে সকলেই আর রোজ স্বপ্ন দেখে, অধরাই থেকে যায় সেগুলো, তাই এরা রোজ অনেক বেশি করে বাঁচে, কারণ এদের বাঁচার কারণ ফুরিয়ে যায় না, এই ছবিও একটা চলার কথাই বলে, গন্তব্যের কথা নয়।
আরও পড়ুন : বলিউডের বায়োস্কোপে কলকাতা / সাম্যদীপ সাহা
৫২ তম গোয়া আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (IFFI, 2021) ভারতীয় প্যানোরামা বিভাগে স্থান করে নিয়েছিল এই ছবিটি। সেই সুবাদেই দেখার সুযোগ হল। ছবিটি আগাগোড়া সাদাকালো। শুটিং হয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জনপদ হলদিবাড়ির বিভিন্ন অংশে। পরিচালক নিজে এই অঞ্চলেরই ভূমিপুত্র। ছবির কাহিনির মূল গড়নে প্রদীপ্ত ভট্টাচার্যের ‘বাকিটা ব্যাক্তিগত’-র একটা প্রচ্ছন্ন প্রভাব চোখ এড়ায় না। কিন্তু সত্রাবিতবাবুর এই প্রথম প্রয়াস তার অকৃত্রিম নিজস্বতায় এক স্বয়ংসম্পূর্ণ ফেবল্। বা মফস্বলীদের দিনলিপি, বা উইয়ে কাটা আপনার ফেলে আসা দিনগুলোর সাদাকালো পোলারয়েড ছবিদের চুপচাপ অ্যালবাম, যা বলবেন।