বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

জীবাণু বনাম জিনিয়াস - অনাক্রম্যতার সন্ধানে এক বিস্মৃত বিজ্ঞানী

ব্রতেশ দাস July 19, 2022 at 5:35 am বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

করোনার আঁচড় কাটিয়ে, হোঁচট খেতে খেতে এই দশক শুরু করেছি আমরা। এখনও যার রেশ বিন্দুমাত্র মলিন হয়নি, বরং মাঝে মাঝেই প্রকট হয়ে উঠছে। আমাদের শরীরের থেকে বেশি ভরসা এখন আমরা মাস্ককে করি। তবে এমনটা চিরকাল ছিল না। এই সেদিনও সামান্য ঠাণ্ডা লাগলে, জ্বর এলে, মায়েরা বলতেন জ্বরের ওষুধ খেয়ে শুয়ে পড়তে, কখনও বা সামান্য জলপট্টি। জ্বর কমে যাবে নিশ্চিত। দিনে দিনে আমাদের আত্মবিশ্বাসের সাথে সাথে শারীরিক ক্ষমতার প্রতিও অবিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে। প্রকৃতি কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতার সাথে যুঝে ওঠার জন্য শরীরে একাধিক মিলিটারি ডিফেন্স বানিয়ে রেখেছেন। আমরা না চাইলেও তারা তীক্ষ্ণ নজরে আমাদের রক্ষা করে চলেছে বিভিন্ন বিদেশি শত্রু থুড়ি, জীবাণুর হাত থেকে। কোন দেশের প্রতিরক্ষায় যেমন নিয়োজিত থাকে বিভিন্ন স্থল, জল ও আকাশচারী প্রতিরোধ; আমাদের শরীরেরও তেমনি এক অন্যতম প্রতিরোধ ব্যবস্থা হল ‘কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম’। সব মানুষকেই দেখি ইম্যুনিটি ভালো হওয়ার দাওয়াই-এর খোঁজ করতে, কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে শরীরের এই বান্দাটির খবর আমরা রাখি না। আজ এই লেখার উদ্দেশ্য খানিক এর মহিমাবর্ণনও বটে।

এখন, এই কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম কী? 

সহজ ভাষায় বললে, এই ডিফেন্স সিস্টেমটি তৈরি হয়েছে একাধিক প্রোটিনের সমন্বয়ে, যাদের C1, C2, C3 এমনভাবে C9 পর্যন্ত নামকরণ করা হয়েছে। খানিকটা সেনাবাহিনীর রেজিমেন্টের মতো। মূলত লিভারে তৈরি হওয়া এই প্রোটিনগুলি আমাদের রক্তরসে উপস্থিত থাকে। রিলে রেসের মতো প্রথম জন সক্রিয় হলে, দ্বিতীয় জনের হাতে ব্যাটন তুলে দেয় অর্থাৎ তাকে সক্রিয় করে তোলে, দ্বিতীয় জন আবার তৃতীয় জনকে সক্রিয় করে... এইভাবে চলতে চলতে অন্তিম লগ্নে এক বিশেষ ধরনের আক্রমণাত্মক অস্ত্র গড়ে ওঠে, যা আমাদের দেহে প্রবিষ্ট জীবাণুর শরীরকে ফুটো করে দেয়। ফলে, তার কোষ থেকে সমস্ত উপাদান বেরিয়ে সলিল সমাধি ঘটে (শরীরের শতকরা ৬০ ভাগই জল কি না!)।  

এখন প্রশ্ন হল, এই প্রথম প্রোটিনটি কীভাবে সক্রিয় হয়? তার আগে তো কেউ নেই? তবে? 

সেখানেই আসে ‘যত মত, তত পথ’-এর প্রসঙ্গ। বিভিন্ন পথ রয়েছে, কিন্তু অভীষ্ট সেই একই; দিনের শেষে ওই সাঙ্ঘাতিক ব্যাকটেরিয়া-ঘাতক অস্ত্রটি তৈরি করা – যার গাল ভরা নাম membrane attack complex বা সংক্ষেপে MAC। এই পথের মধ্যেই একটি হল, classical পথ আর অন্যটি alternative পথ। Classical পথ সক্রিয় হয়ে ওঠে দেহের ভিতর antigen-antibody এই দুইয়ের সংমিশ্রণ ঘটলে। তবে সেসব জটিল কথায় আজ যাব না। আজ আপনাদের শোনাব এক বিজ্ঞানীর ট্র্যাজিক জীবনকথা, যিনি alternative পথকে প্রায় একা হাতে আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরেন, অথচ...

লুই পিলেমার আজ থেকে প্রায় ১১৪ বছর আগে ১৯০৮ সালে জন্মেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। তাঁর পরিবার পরে আমেরিকায় চলে আসে। মেডিসিন পড়তে শুরু করেন ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু তৃতীয় বছরে পড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। কারণ? একাধিক মানসিক সমস্যা, যা তাঁকে শেষদিন পর্যন্ত কুরে কুরে খেয়েছে। 

বিজ্ঞানী লুই পিলেমার 

পিলেমার ফের ১৯৩৫ সালে graduation সম্পূর্ণ করার জন্য পড়াশোনা শুরু করেন, Western Reserve University-তে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উনি বাকি কর্মজীবনের প্রায় পুরোটাই কাটান। পিএইচডি সম্পূর্ণ করার পর বায়োকেমিস্ট হিসেবে বেশ সুখ্যাতিও অর্জন করেন। শুনলে অবাক লাগবে, আজকের দিনে আমরা বাচ্চাদের যে ডিপিটি ভ্যাক্সিন দিই, তার ডিপথেরিয়া আর টিটেনাসের টক্সিন-কে পরিশুদ্ধ করে পৃথকীকরণের কৃতিত্ব এই পিলেমারেরই। 

যাই হোক, এরপর পিলেমারের আগ্রহ তৈরি হয়, ওই ইম্যুনিটি-র জটিল ধাঁধার উত্তর খোঁজায়। যখন এই নিয়ে গবেষণা শুরু করছেন পিলেমার, ততদিনে classical পথের বিভিন্ন জটিলতার উত্তর জানা হয়ে গেছে আমাদের। কিন্তু alternative পথের অস্তিত্ব নিয়ে কোন ধারণাই তৈরি হয়নি তখনও। কিন্তু, সেই সময়েই এক অদ্ভুত পরীক্ষার ফলাফল বেরোল একটি জার্নালে। দেখা গেল, মানুষের রক্তরসের (serum) সাথে zymosan (ঈস্ট-এর দেহ থেকে প্রাপ্ত একরকম শর্করা) মিশিয়ে ৩৭C উষ্ণতায় রেখে দিলে, রক্তরস থেকে C3 (সেই কমপ্লিমেন্ট সিস্টেমের এক একনিষ্ঠ প্রোটিন-সদস্য) একেবারে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। অথচ এমনটা হওয়ার তো কথা ছিল না! পিলেমার লেগে পড়লেন এ রহস্য উদ্ঘাটনের তাগিদে। 

একাধিক পরীক্ষার মাধ্যমে পিলেমার যা বুঝলেন, তার সারমর্ম হল এই যে, রক্তরসে এমন কোন উৎসেচক আছে যা zymosan-এর উপস্থিতিতে C3 অণুকে ভেঙে দেয়। তাই C3 অণুগুলিকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এই বিশেষ উৎসেচকটি, zymosan অণু মিশ্রণে যোগ করা মাত্র ওর গায়ে লেগে যায় (adsorption)। সে জন্যেই zymosan-কে ছেঁকে বের করে নিলে, এই উৎসেচক-কেও তার সাথে সাথেই মিশ্রণ থেকে আলাদা করা সম্ভব। খানিক বঁড়শিতে মাছ গেঁথে তুলে আনার মতো ব্যাপার আর কী!

ল্যাটিন শব্দ ‘perdere’ মানে হল ‘to destroy’। পিলেমার এবং তাঁর সহ-গবেষকরা এই উৎসেচকটির নাম দিলেন properdin। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার প্রকাশিত হল ‘Science’ জার্নালে, ১৯৫৪ সালে। কেন যুগান্তকারী, সে কথায় আর খানিক বাদেই আসছি। আমাদের রক্তরসের ভিতর যত প্রোটিন থাকে তার ০.০৩% হল গিয়ে এই properdin। এর আগে পর্যন্ত আমরা জানতাম কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম-কে একভাবেই সক্রিয় করে তোলা যায়। আর সেটা classical pathway। যা দেহের ভিতর antigen-এর সাথে antibody-র সংযোগ ছাড়া অন্য কোনও ভাবে সক্রিয় হয় না। এরপর আরও স্পষ্ট হল অন্য এক পথের ধারণা। Properdin-এর উপস্থিতিতে C3 ভেঙে যায়, ভাঙ্গা C3 সক্রিয় করে তোলে alternative পথকে এবং শেষে MAC-এর মতো অস্ত্র তৈরি হয়ে যায় এই পথ দিয়েও, লাগে না কোন antigen-antibody মিশ্রণের উপস্থিতি। 

অল্টারনেটিভ কমপ্লিমেন্ট সিস্টেমের রৈখিক চিত্র 

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই alternative পথটি? Classical-পন্থায় আমরা তো দিব্যি ছিলাম। আসলে আমাদের দেহে, ইম্যুনিটি বা অনাক্রম্যতা দুরকমের। এক হল সহজাত আর এক, অর্জিত। এই অর্জিত অনাক্রম্যতা, নাম শুনেই বোঝা যায়, বহু পরিশ্রমের ঘাম ঝরিয়ে অর্জন করতে হয়। না, আপনি নিজে হয়তো ঝরান না, পরিশ্রম করে আপনার ইম্যুন কোষগুলি। সেই জন্যেই এই ধরনের শক্তিশালী প্রতিরোধ তৈরি করতে বেশ কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হয়। কোনও এক জীবাণু দ্বারা প্রথমবার সংক্রমণ হয়ে, আবার দ্বিতীয়বার আক্রমণের সময় এই প্রতিরোধের অর্জন ঘটে। শরীরে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। ইতোমধ্যে আমরা এও জেনেছি, অ্যান্টিজেনের সাথে অ্যান্টিবডির মিলন না হলে কোনোভাবেই ক্লাসিক্যাল কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম চালু হবে না। অর্থাৎ এটুকু বোঝা যাচ্ছে, এই অর্জিত বস্তুটি, বস্তুতই দারুণ ego নিয়ে চলেন। কিন্তু শরীরের প্রয়োজন তো ego দিয়ে মেটে না। সেক্ষেত্রে মাঠে নামেন আমাদের সহজাত অনাক্রম্যতা। ইনি একেবারে জন্মমুহূর্ত থেকে আমাদের সঙ্গ দেন। এই সহজাত গুণই প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে, যতক্ষণ না আরও ব্যাপক এবং শক্তিশালী অর্জিত অনাক্রম্যতা তৈরি হয়। Classical পথ হল ওই এলিট, অর্জিত শ্রেণির পথ। আর alternative পথ এই মেঠো, অপেক্ষাকৃত সাধারণ শ্রমিকশ্রেণির পথ। যখন দেহ ভালো করে জীবাণুর চরিত্র বুঝেই উঠতে পারে না, যখন দেহে কোন অ্যান্টিবডি তৈরিই হয়নি, তখনই ঢাল-তরোয়াল নিয়ে সেই অজানা শত্রুর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে এই alternative পথটিই। অর্থাৎ সেদিক দিয়ে দেখলে, দেহের ডিফেন্স সিস্টেমের এক অপরিহার্য প্রাথমিক প্রতিরোধের পথ আবিষ্কার করেছিলেন পিলেমার, আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে।

এমন এক আবিষ্কার, আর তার সাথে ডিপথেরিয়া-টিটেনাসের টক্সিনের বিশুদ্ধিকরণ (purification) – এই দুইই তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে পারত ইতিহাসে। বাস্তবে উঠেওছিল আলোড়ন। টাইম ম্যাগাজিন, নিউ ইয়র্ক টাইম্‌স প্রকাশ করেছিল এই অনন্য কীর্তি। কিন্তু প্রথাগতভাবে গবেষণার পেপার জার্নালে প্রকাশ করা ছাড়া, পিলেমার আলাদা করে এই অণুটির জন্য কোনও দাবি বা প্রচার করেননি।

যাই হোক, ১৯৫৭-৫৮ সালে রবার্ট নেলসন, পিলেমারের পরীক্ষার এক অন্য সম্ভাব্য কারণ জানালেন। উনি বললেন, এমন কোন নতুন প্রোটিন পিলেমার নাকি আবিষ্কারই করেননি! আসলে প্রাকৃতিকভাবে zymosan অণুর কোনও অ্যান্টিবডি ওই মিশ্রণে এমনিই উপস্থিত ছিল, যা এই পুরো কাণ্ডকারখানাগুলো ঘটিয়েছে। খুব স্পর্শকাতর কিছু বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষায় ওই মিশ্রণগুলোয় সামান্য পরিমাণে anti-zymosan অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখা গেছিল। কিন্তু, সেই অ্যান্টিবডি-ই এমন ফলাফলের নেপথ্যে কিনা, তা নিয়ে কেউ নিশ্চিত হতে পারছিল না। অথচ, বিজ্ঞানীমহলের মনের ভেতর একটা খচখচানি জন্মে গেছিল অচিরেই। তবে কি পিলেমারের সমস্ত ফলাফল ভুল? এই অ্যান্টিবডি থাকার অর্থ alternative পথ বলে কিছু নেই! সমস্তই classical পথের জন্যই হয়েছে, যা কিনা সক্রিয় হয়ে ওঠে যেকোনও antigen-antibody মিশ্রণের উপস্থিতিতে! 

এ আমাদের ইতিহাস-স্বীকৃত সত্য – প্রচলিত পথের বাইরে গিয়ে ভাবলে বিদ্রুপই জোটে, সে বিজ্ঞানীই হন বা সাধারণ মানুষ। পিলেমার এইসমস্ত যুক্তি-প্রতিযুক্তির আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত হলেন। কোনোদিনই মানসিকভাবে তেমন সুস্থির ছিলেন না। এখন আরোই আঁকড়ে ধরলেন অন্ধকারকে। বেছে নিলেন মদ্যপান, ড্রাগ সেবন। ব্যবহার প্রায় পাগলের মতো হয়ে উঠল। হঠাৎ-ই ১৯৫৭ সালের ৩১শে আগস্ট, এই সমস্ত উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্কের আবহাওয়ায় শ্বাস নিতে নিতে দমবন্ধ হয়ে এল পিলেমারের। বারবিচ্যুরেট ওভারডোজ। এবং মৃত্যু। লোকে তখন বলেছিল আত্মহত্যা, কেউ ভেবেছিল দুর্ঘটনা। তবে হত্যার কথা কেউ ভাবেনি হয়ত। কে জানে?

পরবর্তীকালে স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞান আরও উন্নত হয়েছে। এই ঘটনার বছর তিনেক বাদেই এমন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল, যা প্রমাণ করে দিয়েছিল ওই সামান্য anti-zymosan অ্যান্টিবডিকে মিশ্রণ থেকে ছেঁকে বার করে দিলেও C3 অণু একইভাবে ভেঙ্গে যায়। অর্থাৎ, মূল কর্তা সেই properdin; প্রমাণিত হল পিলেমারের জিনিয়াস। আবিষ্কৃত হল ‘কমপ্লিমেন্ট সিস্টেম’ সক্রিয় হয়ে ওঠার আর এক পথের নাম। ‘The Alternative Pathway’ – যা নিয়ে আজও একাধিক গবেষণা চলছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে, এমনকি নানান autoimmune রোগের ওষুধও তৈরির চেষ্টা হচ্ছে এই পথের বিভিন্ন অণুকে টার্গেট করে।

নাহ্‌, পিলেমার ফিরে আসবেন না। ফিরে আসবে মানুষের এই দম্ভ, ফিরে আসবে মানুষের অযথা আত্মম্ভরিতার ইতিহাস। আবারও পিলেমারের মতো মানুষ আসবেন, আমরা তাঁদের মাথা তুলতে দেব না। মানসিক সমস্যাকে ভীষণ ছোট করে দেখব আবারও, আত্মহত্যা হয়ে উঠবে মহামারি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা, ভীষণ অবুঝ, উন্নত Sapiens-রা শিখতে না চাইলেও, পিলেমারেরা শেখাতে কোন কার্পণ্য করবেন না। জান কবুল, তবু...


**************************** 

তথ্যসূত্র: 

১) Lepow, I. H. 1980. Louis Pillemer, properdin and scientific controversy. Presidential address to American Association of Immunologists in Anaheim, CA, April 16, 1980. Journal of Immunology 125:471–478.

২) Pillemer, L., et al. 1954. The properdin system and immunity. I. Demonstration and isolation of a new serum protein, properdin, and its role in immune phenomena. Science 120:279–285. 

৩) Kuby Immunology (8th ed.) W. H. Freeman and Company. 2019. pp. 377–380. ISBN 978-1-319-26722-3.

***************************** 

#সিলি পয়েন্ট # বিজ্ঞান # ব্রতেশ দাস # অনাক্রম্যতা #Louis Pillemar # immunity # science # Bratesh Das # alternative pathway # complement system # silly point

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

29

Unique Visitors

182659