ফিচার

কাগজের কাপে চা? বিষাক্ত প্লাস্টিক কণা যাচ্ছে পেটে, বলছেন বিজ্ঞানীরা

টিম সিলি পয়েন্ট April 4, 2021 at 6:56 am ফিচার

যাঁরা সামান্য চোখ-কান খোলা রাখেন, তাঁরা জানেন যে প্লাস্টিকের কাপ পরিবেশবান্ধব তো নয়-ই, শরীরের পক্ষেও অপকারী। ফলে আজকাল চা-পিপাসু বাঙালির কাছে অত্যন্ত দ্রুত হারে প্লাস্টিক কাপের বিকল্প হয়ে উঠছে কাগজের কাপ। অনেকেই কাগজের কাপকে পরিবেশবান্ধব এবং ক্ষতিবিহীন ভাবেন। দোকানে, রাস্তাঘাটে, ট্রেনে আজকাল প্রায় সব চা-বিক্রেতাই এই কাগজের কাপ রাখেন। পরিবেশ-বান্ধব জিনিস ব্যবহার করছি ভেবে আত্মতুষ্টিও আসে অনেকের। কিন্তু জানেন কি, এই কাগজের কাপেই ঘাপটি মেরে রয়েছে প্লাস্টিক? এবং সে কারণেই কাগজের কাপ শরীরে ভয়ংকর মারণ রোগ ডেকে আনতে পারে।

একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে এইসব কাগজের কাপের ভিতরদিকে থাকে প্লাস্টিকের একটি পাতলা আস্তরণ, যা কাপকে টেকসই করতে ব্যবহৃত হয়। এর নাম হাইড্রোফোবিক ফিল্ম। গরম তরলের সংস্পর্শে এলেই এই তরল গলে গিয়ে অজস্র মাইক্রোপ্লাস্টিক কণায় ভেঙে যায়। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলি সরাসরি আমাদের রক্তের সঙ্গে মেশে। পাকস্থলীর কোষ এবং রক্তে এই কণার প্রবেশ নিয়ে বিজ্ঞানীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। যেভাবে চারদিকে কাগজের কাপে চা কফি খাবার প্রবণতা বাড়ছে, তার বিপদের দিকটি উঠে আসছে সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায়। খড়গপুর আইআইটির একদল গবেষক কিছুদিন আগে একটি আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে দাবি করেছেন, ১০০ মিলিলিটার গরম (৮৫-৯০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) তরল পানীয় থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে ফ্লুরাইড, ক্লোরাইড, সালফেট, নাইট্রেট আয়ন সহ প্রায় ২৫০০০ মাইক্রোপ্লাস্টিক নির্গত হয়। কাগজের কাপে কেউ যদি প্রতিদিন তিন কাপ চা পান করেন, তাহলে তাঁর পেটে যাবে ৭৫০০০-এর কাছাকাছি বিষাক্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা। প্লাস্টিকে থাকা বিষাক্ত উপাদান ‘বিসফেনল’ ক্যান্সার সৃষ্টিতে সহায়ক। এছাড়াও আরও নানা ছোট-বড় রোগের জন্ম হতে পারে। তলানিতে এসে ঠেকতে পারে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। হারিয়ে যেতে পারে প্রজনন শক্তিও। নিরীহ চায়ের কাপ থেকে আপনার অগোচরেই হয়তো আপনার শরীরে বাসা বাঁধছে রোগের বীজ। 

এমনিতেই আমাদের দৈনন্দিন জীবন এখন যেসব অভ্যাসের অধীন, তাতে প্রচুর পরিমাণ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রতিদিনই আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এইসব কণা শরীরে প্রবেশাধিকার পায় মূলত শ্বাসবায়ু, খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে। প্লাস্টিকের খাবার পাত্র, জলের বোতল ইত্যাদি এক্ষেত্রে সরাসরি অনেকটা দায়ী। তাছাড়া আমরা যেভাবে নির্বিচারে প্লাস্টিকজাত দ্রব্য ব্যবহার করি এবং যত্রতত্র ফেলি, তাতে এই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার বিপদ দিনে দিনে ভয়াল আকার ধারণ করছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, একজন গড়পরতা আমেরিকান প্রতি বছর মাইক্রোপ্লাস্টিকের ৭০০০০ এরও বেশি কণা গ্রহণ করেন। কেবলমাত্র বোতলজাত জল পান করা লোকেরা আরও বেশি পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করে। কাগজের কাপ নিয়ে এই সাম্প্রতিক লাল সংকেত এই বিপদের তালিকায় আরেকটি সংযোজন, যা নিয়ে অনতিবিলম্বে সচেতনতা গড়ে তোলা প্রয়োজন। 

ফলে যাকে একেবারেই অপাংক্তেয় করে রাখা হয়, একমাত্র সেই মাটির ভাঁড়ই এ ব্যাপারে সবদিক থেকে নিরাপদ। না হলে ব্যাগে নিজের কাপ নিয়ে ঘুরতে পারেন। চা বা কফি খাবার পর ধুয়ে নিলেই হল। এখন ঢাকনা দেওয়া স্টিলের কাপও পাওয়া যায়, যেগুলো খাবার পরপরই না ধুলেও চলে - একেবারে বাড়ি গিয়ে ধুলেও অসুবিধা নেই। বিকল্প হাতের কাছেই মজুত। দরকার শুধু সচেতনতা আর সদিচ্ছা।  

….…………….

ঋণ : নন্দগোপাল পাত্র / সংবাদ প্রতিদিন (উত্তর সম্পাদকীয়) / ১৯ মার্চ, ২০২১

#paper cup #tea #কাগজের কাপ #মাইক্রোপ্লাস্টিক #microplastic #মাটির ভাঁড় #চা #কফি #স্বাস্থ্য #বিজ্ঞান #টিম সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

59

Unique Visitors

177648