ফিচার

শতবর্ষ পেরিয়ে নারীকল্যাণে ব্রতী ‘এর্নাকুলাম মহিলা সমিতি’

টিম সিলি পয়েন্ট Sep 23, 2022 at 12:10 pm ফিচার

আজকের দিনে নারীকল্যাণ সমিতি বা মহিলাদের জন্য তৈরি বিভিন্ন সংগঠন নতুন কিছু না। আমরা প্রায় প্রত্যেকেই পরিচিত এমন কোনো না কোনো সংগঠনের সঙ্গে। কিন্তু একটি মহিলা সংগঠন একশো বছরেরও আগে প্রতিষ্ঠা হয়েছে এবং এখনও সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে, এই তথ্য খানিক অবাক করে বটে।

এমনই একটি মহিলা সমিতি রয়েছে দক্ষিণ ভারতের কেরালার এর্নাকুলামে। ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত 'স্ত্রী সমাজম' বা 'এর্নাকুলাম মহিলা সমিতি' নামক এই সংস্থা এখনও নিরবচ্ছিন্নভাবে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন, মহিলাদের রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে, সামাজিক কাজে তাদের এগিয়ে আসার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই সংস্থা। এই সংস্থার জন্ম খুব পরিকল্পিতভাবে হয়নি। এর্নাকুলাম পাবলিক লাইব্রেরির একটি ঘরে টি কে. কৃষ্ণ মেনন, আম্বাদি শঙ্করা মেনন, বিচারপতি পাল্লাথিল নারায়ণ মেনন, নারায়ণ আইয়ার এবং মারাইল কৃষ্ণ মেনন - এই পাঁচজনের একটি আলোচনাচক্রে স্থির হয় একটি মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করা হবে, যা মহিলাদের সার্বিক অগ্রগতির লক্ষ্যে কাজ করবে। 

১৯১৯ সালে সমাজসেবার জন্য রাজা পঞ্চম জর্জের থেকে কাইজার-ই-হিন্দ পুরষ্কারপ্রাপ্ত পারুকুট্টি নেথিয়ার আম্মা এই সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন, এবং সমিতির প্রথম প্রেসিডেন্ট হন লক্ষ্মীকুট্টি নেথিয়ার আম্মা। কেরালা রাজ্যের প্রথম মহিলা স্নাতক আম্বাদি কাথিয়ানি আম্মা সমিতির প্রথম সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ ভি এন বেণুগোপাল জানিয়েছেন, এই সমিতি কেরালার প্রথম মহিলাদের জন্য এবং মহিলা পরিচালিত সমিতি, যদিও এর সূচনা হয়েছিল কয়েকজন নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী পুরুষের হাত ধরে। এই সমিতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সৈনিকদের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করে সাহায্য করেছিলো। পরবর্তীকালে কেরালার কোচি অঞ্চলে বিশেষত অনগ্রসর শ্রেণির শিশু ও মহিলাদের জন্য কল্যাণমূলক কাজ করে 'এর্নাকুলাম মহিলা সমিতি'। 

আরও পড়ুন: অসংখ্যের আশংকা : পেপসি ও পাটিগণিতের মামলা

দেশে যখন শিশুদের নার্সারি স্তরের লেখাপড়ার ধারণাই ছিল না, তখন ১৯৫৪ সালে একটি নার্সারি স্কুল চালু করে 'এর্নাকুলাম মহিলা সমিতি'। এই স্কুল ছিল অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের বাচ্চাদের জন্য। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই স্কুলটি এখনও চালু আছে এবং একইভাবে পরিষেবা দিয়ে চলেছে নিম্নবিত্ত পরিবারের শিশুদের। সমিতি প্রতিষ্ঠার পর আস্তে আস্তে কাজের পরিসর বাড়ায় কার্যক্রম চালানোর জন্য বড়ো জায়গার প্রয়োজন হয়, সেইজন্য ১৯৪৮ সালে সমিতির একটি নতুন ভবন তৈরি হয়, এই ভবনটি উদবোধন করেন লেডি এডউইনা মাউন্টব্যাটেন। ওই বছরেই নতুন ভবনে শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য একটি গ্রন্থাগার গঠন করা হয়, যেখানে প্রায় ২৩,০০০ বই ছিলো। এই গ্রন্থাগারটি বর্তমানে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। ১৯৯০ সালে এই সমিতি বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য একটি স্কুল স্থাপন করে। মাত্র ৫ জনকে নিয়ে স্কুলটি শুরু হলেও এর বর্তমানে এর ছাত্রসংখ্যা ৪৫। 


বর্তমানে মহিলারা যে ধরনের সমস্যার স্মমুখীন হচ্ছেন, সেইসব সমস্যা মোকাবিলার জন্যও মহিলাদের সাহায্য করে এই সমিতি। সাইবার অপরাধের শিকার হলে বা বিবিধ সমাজমাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে কীভাবে তার মকাবিলা করতে হবে, সেসব বিষয়ে মহিলাদের সাহায্য করে থাকে সমিতি। এছাড়া মাঝেমধ্যেই ছাত্রছাত্রীদের জন্য নানা বিষয়ে বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। এছাড়াও চক্ষু পরীক্ষা শিবির, রক্তদান শিবির, বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রমে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ইত্যাদি সমাজকল্যাণমূলক কাজ নিয়মিত করে এই সমিতি। 

#এর্নাকুলাম #নারীকল্যাণে #স্ত্রী সমাজম #নারী স্বাধীনতা #ফিচার #সিলি পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

40

Unique Visitors

182412