ফিল্ম/ওয়েব সিরিজ রিভিউ

ফিল্ম রিভিউ : অনন্ত (২০২২)

শৌভিক মুখোপাধ্যায় Jan 3, 2023 at 4:58 am ফিল্ম/ওয়েব সিরিজ রিভিউ

পরিচালনা : অভিনন্দন দত্ত
কাহিনি : অভিনন্দন দত্ত
শ্রেষ্ঠাংশে : ঋত্বিক চক্রবর্তী, সোহিনী সরকার
প্ল্যাটফর্ম : Zee 5

অনন্ত আসলে এক অপেক্ষার নাম। 

পেতে পেতেও না পাওয়ার নাম অনন্ত। ক্রমশ বুড়িয়ে যেতে যেতে হঠাৎ সবুজ ফিরে পাওয়ার নাম অনন্ত। আবার সে সবুজ হারিয়ে ফেলে একাকী বেঁচে থাকার নাম অনন্ত। সে সবুজ ততদিনে বাসা বেঁধেছে মনের ভিতর। 

দুটি মানুষ। একা। তাদের কথা হয় না। দেখা হয়। তিনটে তিন থেকে চারটে। বিকেলবেলায় পুরোনো বাড়ির ঝরাপাতা-ঢাকা সিঁড়ির ধাপে তাদের এটুকু দেখা শোনা। মেয়েটি স্কুলে পড়ায়। ছেলেটি তেমন কিছু করে না। বাড়ি ভাড়ার টাকায় তার দিন চালানোর ব্যবস্থা হয়ে যায়। একদম কিছু করে না বলা ভুল। অপেক্ষা করে। অপেক্ষা করে মাতাল বাবার বায়নাক্কা কোনোমতে নাকে মুখে কিছু গুঁজে স্কুলে যাওয়ার সময় মেয়েটির এক ঝলক তাকানোর। অপেক্ষা করে, কবে মেয়েটি ডেকে নেবে। মেয়েটিও অপেক্ষা করে। যাবতীয় প্রতিকূলতা মুখ বুজে মেনে নিয়েও নিজের ভিতরে এক নদী বাঁচিয়ে রাখে। বাঁচিয়ে রাখে সেই নদী পাশের অরণ্য। যেখানে হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটি নিজেকে খুঁজে পায়। এ তার নিজস্ব উপনিবেশ। দমবন্ধ করা বাস্তবের থেকে ছুটি নিয়ে এখানে দু-দণ্ড কাটিয়ে সে বেঁচে থাকে। একদিন এই ক্যাবলা ছেলেটি তার খোঁজ পায়। এই নদীর থই পাওয়া ভার। অতল জলে নেমে সে সামলাতে পারবে তো? সাঁতার জানে?

তাদের সঙ্গে থাকা হয় না। মাতাল বাপের পছন্দ করা ছেলেটিকে ভালো না লাগলেও মেয়েটি বিয়ের পিঁড়িতে বসে। একা কাঁদে, কিছু বলে না। তারপর একদিন সমস্ত মানিয়ে চলায় শেষে দাঁড়ি টেনে দেয়। শুভ-র কী হয়? মিষ্টু-র সঙ্গে শেষ দেখায় সে জিজ্ঞাসা করেছিল শুভ-র কিছু বলার আছে কিনা, সে কথা কি বলা হয়েছিল তার? সিঁড়ির আলাপ কি সত্যিই ঘটেছিল, নাকি এ শুভ-র মনে বানিয়ে তোলা? দুজনে কি একবারও কথা বলতে পেরেছিল? দূর থেকেই কি পরস্পরকে ভালোবেসে গেল তারা? সিনেপর্দার ক্যানভাসে ক্রমান্বয়ী ফ্রেম জুড়ে সেসব প্রশ্নের উত্তর খেলা করে।



ছবি? না কবিতা? অভিনয় ছাড়া এই ছবির একটি সম্পদ যদি হয় তার আবহ, অন্য সম্পদ অবশ্যই ক্যামেরার মুন্সিয়ানা। একের পর এক অনবদ্য ফ্রেম, আলো ছায়ার দুরন্ত কাজ, কখনও বা অতীত বর্তমানের সংযোগবিন্দু বোঝাতে জাম্পশটের দুরন্ত ব্যবহার চোখ সরাতে দেয় না। আবহ সংগীতে নদীর কুলকুল ধ্বনি যেন আরও একটি চরিত্র হয়ে উঠেছে। ঋত্বিক চক্রবর্তীর অভিনয় সম্পর্কে আর নতুন কিছু বলার নেই। ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনের মধ্যে দিয়ে শুভ চরিত্রটির ভালো লাগা, খারাপ লাগা, রাগ, দুঃখ, হতাশা, ব্যর্থতা যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বার বার তা দেখতে ইচ্ছে করে। সোহিনী সরকারও পাল্লা দিয়ে চমৎকার। বাস্তবের জমিনে হেরে যাওয়া মিষ্টু আর কল্পনায় বুনে তোলা নিজস্ব উপনিবেশে ঘুরে বেড়ানো সত্যিকারের স্বাধীন মিষ্টুর ফারাকটুকু সযত্নে ফুটিয়ে তুলতে কোনো কসুর করেননি। পার্শ্ব অভিনেতাদের যোগ্য সংগতে অনন্তের বুকে চির অপেক্ষার সুরটুকু এত স্পষ্ট হয়ে বেজেছে। 

অনন্ত আসলে এক কবিতার নাম।

........................ 
#ঋত্বিক চক্রবর্তী #সোহিনী সরকার #Zee 5 #silly পয়েন্ট

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

101

Unique Visitors

177763