নিবন্ধ

পৌরাণিক নাকি সাংসারিক : গোয়েন্দা দময়ন্তী

বসুন্ধরা মন্ডল April 10, 2021 at 4:58 am নিবন্ধ

একুশ শতকের বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের পাঠক মিতিনমাসির মতো নিপুণ গৃহিণীর সংসার সামলে গোয়েন্দাগিরির চিত্র দেখতে দেখতে বড় হয়েছে। তাই চুড়ি পরা হাতেও যে বন্দুক তুলে নেওয়া যায়; ছেলে ক্যারাটে ক্লাসে অকারণে কাউকে ঘুসি মেরে বাড়ি ফিরলে তাকে কান ধরে ওঠবস করানো মা-ও যে প্রয়োজনে অপরাধীকে ক্যারাটের ঘায়ে ঘায়েল করতে পারে, এ নিয়ে একুশ শতকের পাঠকের মনে তেমন কোনও বিস্ময় জাগে না। অন্যদিকে সংসার সন্তান সামলানোর পাশাপাশি নামী কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর যে রীতিমতো মাথা খাটিয়ে জটিল মনস্তত্ত্বজাত অপরাধের জট ছাড়িয়ে ফেলতে সক্ষম, সে ছবিও পাঠক গোয়েন্দা গার্গীর কাহিনির মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন। এক কথায় বলতে গেলে বাংলা গোয়েন্দাকাহিনির পাঠকরা চুড়ি পরা, খুন্তি নাড়া হাতের বন্দুক চালানো দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, অপরাধজগতের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারা শক্তিশালী দৃঢ় গোয়েন্দা চরিত্র এমন আটপৌরে হয়ে উঠল কীভাবে!

বাংলা সাহিত্যের প্রথম মেয়ে গোয়েন্দা কৃষ্ণার দিকে তাকালে দেখা যায়, কৃষ্ণা কলেজপড়ুয়া, রূপে মোহময়ী হওয়ার পাশাপাশি অত্যন্ত উজ্জ্বল ছাত্রী, ঘোড়ায় চড়তে পারে, রিভলভার চালাতে পারে, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারে। প্রভাবতী দেবী সরস্বতী ছাত্রীদের সামনে আধুনিক নারীর আদর্শ রূপ ফুটিয়ে তোলার জন্য এই চরিত্রটি নির্মাণ করলেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কৃষ্ণার মাসতুতো দিদি যখন কৃষ্ণাকে সবার সামনে উপস্থিত করে তার পরিচয় দেয়, তখন তার বিভিন্ন গুণের পরিচয় দেওয়ার সময় বিশেষভাবে উল্লেখ করে, কৃষ্ণা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সে বিয়ে করবে না। এই প্রসঙ্গে পাশ্চাত্য ফেমিনিজমের দ্বিতীয় তরঙ্গ, বিশেষত, সিমোন দ্য বোভোয়ার মাতৃত্বের শৃঙ্খলের কথা মনে পড়ে। ভারতীয় সমাজব্যবস্থায় বিয়ে আসলে সন্তান উৎপাদনের পূর্ব প্রস্তুতি। স্বেচ্ছায় সন্তানহীন থাকার সিদ্ধান্ত লেখিকার সময়কালে তো বটেই, বর্তমান একুশ শতকীয় সমাজেও বিরল। তাই ‘ফ্রিডম ফ্রম রিপ্রোডাক্টিভ স্লেভারি’কে সমর্থন করতে গেলে ভারতীয় নারীকে সারাজীবন অবিবাহিত থাকার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রভাবতী দেবী সরস্বতী নির্মিত শিখার ক্ষেত্রেও আমরা একইরকমের মনোভাব দেখতে পাই। কৃষ্ণা এবং শিখা চরিত্র দুটি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। তাই লেখিকা কাহিনির মাঝে  বারবার মনে করিয়ে দেন, এরা মেয়ে হয়ে যে সাহসিকতার পরিচয় দিচ্ছে, তা খুব বেশি বাঙালি যুবকের পক্ষেও সম্ভব নয়। 

          এই অবিবাহিত নারী গোয়েন্দার পর পাঠক এনিড ব্লাইটনের ‘ফেমাস’ ফাইভের আদলে নির্মিত গোয়েন্দা গণ্ডালুদের দেখতে পায়। বিশ শতকের ছয়ের দশক থেকে সন্দেশের পাতায় প্রকাশিত এই স্কুল পড়ুয়া চার মেয়ে কালু, মালু, টুলু ও বুলুর অ্যাডভেঞ্চারের কাহিনি প্রকাশিত হতে থাকে। অন্যদিকে ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’দের দুই মেয়ে সদস্য বাচ্চু ও বিচ্চুও স্কুলপড়ুয়া। বলা বাহুল্য নলিনী দাশ এবং ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র নির্মাণের মধ্যে নারীবাদ উল্লেখযোগ্য কোনও প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। পাঠকের মনে যখন মেয়ে গোয়েন্দা বলতে কলেজপড়ুয়া, স্কুলপড়ুয়া কিশোরী মেয়ের ছবি ভেসে উঠতে শুরু করেছে,  সেই সময় বাঁধা গতের বাইরে এসে মনোজ সেন বাঙালি পাঠকের সামনে এক বিবাহিত মেয়ে গোয়েন্দাকে উপস্থিত করলেন। সাতের দশক থেকে ‘রোমাঞ্চ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকল রহস্যসন্ধানী দময়ন্তীর গোয়েন্দাকাহিনি।

         নারী গোয়েন্দা বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীবাদী ভাবনাচিন্তাকে একেবারে বাদ দিয়ে আলোচনা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই এক্ষেত্রেও নারীবাদী ভাবনার কথা চলেই আসে। ভারতীয় প্রেক্ষাপটে নারী অধিকারের প্রথম তরঙ্গ আসে উনিশ শতকের নবজাগরণের হাত ধরে। অন্তঃপুর থেকে বেরিয়ে এসে সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণের প্রবণতাকে দ্বিতীয় স্তর বলা যেতে পারে। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিবাহিত নারীর মর্যাদা, ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের অধিকারের প্রসঙ্গকে ভারতীয় নারীবাদের তৃতীয় স্তর হিসেবে ধরা যেতে পারে। বিশ শতকের শেষাংশের দিকে আমরা দেখতে পাই নাগরিক মধ্যবিত্ত পরিবারে নারী-পুরুষের সম্পর্কের মধ্যে বেশ খানিকটা সাম্য এসেছে। শুধুমাত্র বিয়ের কারণে এক নারী নিজের জীবনের সবকিছু বিসর্জন দিয়ে গৃহবধূর ভূমিকায় জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে না, অন্তঃপুরের গণ্ডি পেরিয়ে নারীরা বিভিন্ন পেশায় সফলভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হচ্ছে। এর প্রভাব বাংলা গোয়েন্দাসাহিত্যেও দেখা গেল। এতদিন মেয়ে গোয়েন্দা নির্মাণের ক্ষেত্রে রচয়িতারা কলেজপড়ুয়া বা স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের চরিত্র তৈরি করছিলেন, এবার সেখানে এল বিবাহিত এবং কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত মেয়ে গোয়েন্দা। 

                     দময়ন্তীর গোয়েন্দাজীবনের সূত্রপাত তার বিবাহিত জীবন শুরু হওয়ার তিন বছর পর। দময়ন্তীর জীবনসঙ্গী সমরেশের বয়ান থেকে জানা যায় যে, দময়ন্তী ইতিহাসে এম.এ. করেছে; চার বছরের প্রেমপর্ব পেরিয়ে তাদের বিয়ে হয়েছে; আর তিন বছর ধরে পঁচাত্তর নম্বর অর্কিড রোডের বাড়িতে তারা সংসার করছে। 

          প্রথম কাহিনি ‘সরল অঙ্কের ব্যাপার’-এ দময়ন্তীর পেশাগত জীবনের নির্দিষ্ট উল্লেখ না থাকলেও পরবর্তী কাহিনিগুলিতে দেখা যায় সে ইতিহাসের অধ্যাপিকা। সমরেশ দত্তগুপ্ত পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। দময়ন্তীর পূর্বজীবনের কোনও প্রসঙ্গ কাহিনিগুলিতে চোখে পড়ে না। তার বিবাহপূর্ব আত্মীয়স্বজন কোনও কিছুরই কোনও পরিচয় পাওয়া যায় না। তাই মানুষ দময়ন্তীর চরিত্র বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, জন্মগত আর্থ-সামাজিক অবস্থান, কিংবা তার শিক্ষা, বেড়ে ওঠা কোনোটা নিয়েই বিশেষ কিছু বলার থাকে না। সময় সুযোগ পেলে রহস্য সমাধান করলেও নিজের সম্পর্কে দময়ন্তী বলে, সে গোয়েন্দা নয়, ইতিহাসের অধ্যাপিকা। কোনও ঘটনার পিছনের পারম্পর্য এবং তার কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে বের করে তার বিশ্লেষণ করা  যেমন ঐতিহাসিকের কর্তব্য, তারও তাই। দময়ন্তীর কাহিনিগুলি পড়তে গিয়েও দেখা যায়, একটা ঘটনার সঙ্গে আরেকটা ঘটনার যোগসূত্র বের করার ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি অনুমান করেই সে নিশ্চিন্ত হচ্ছে না, একাধিক সম্ভাবনার কথা আলোচনা করছে এবং প্রতিটা সম্ভাবনার ক্ষেত্রে কী অসংগতি রয়েছে তা খুঁজে বের করে সম্ভাবনাগুলোকে এক এক করে বাতিল করে শেষ পর্যন্ত একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছে।  

      প্রথম কাহিনিতে দময়ন্তী রহস্য সমাধান করে ফেলায় সমরেশের বন্ধু ইন্সপেক্টর শিবেন সেন অবাক হয়। অন্যান্য কাহিনিতে দেখা যায় দময়ন্তী গোয়েন্দা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গেছে। তবে রহস্য সমাধান করে পারিশ্রমিকের প্রত্যাশী নয় সে। ‘নকল হীরে’ কাহিনিতে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী  শৈবাল মিত্র তাঁর মেয়ে দীপান্বিতাকে খুনের দায় থেকে বাঁচানোর পুরস্কার হিসেবে দময়ন্তীকে যে-কোনো মূল্য দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু দময়ন্তী জানায়, সে পেশাদার গোয়েন্দা নয়, টাকা নিয়ে কাজ করে না। কাউকে বাঁচানোর দায়িত্ব তার পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়, কোথাও কোনও রহস্য থাকলে সে কেবল তার জট ছাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। এই জট ছাড়ানোর কাজে নামার ফলে অনেক সময়ই তাকে অপরাধজগতের পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতারও মুখোমুখি হতে হয়েছে। ‘সূর্যগ্রহণ’ কাহিনিতে সমরেশের বন্ধু রঞ্জিতের কাছে মধুপুরে ছুটি কাটাতে গিয়ে দময়ন্তীর কলেজের সহপাঠী ডিআইজি জয়ন্ত চতুর্বেদীর সঙ্গে দেখা হয়। রঞ্জিতের মুখে তার গোয়েন্দাগিরির কথা শুনে জয়ন্ত বলে, “সে কী, তুমি আজকাল প্রফেসারি ছেড়ে ডিটেকটিভগিরি শুরু করলে নাকি? মেয়েছেলের লাইন এসব নয় হে, চোর-ছ্যাঁচোড় গুণ্ডা-দাঙ্গাবাজদের সঙ্গে টক্কর দেওয়া তোমাদের কম্ম নয়।” এমন কথা বললেও এক্সিকিউটিভ চিফ নিশীথ সান্যাল দময়ন্তীকে ইন্দার সিংয়ের মৃত্যুর পর তদন্তের ভার দিলে জয়ন্ত দময়ন্তীকে সাহায্য করে। এবং পরবর্তী অনেক কাহিনিতেই দময়ন্তীর সাহায্যকারীর ভূমিকায় জয়ন্তকে দেখা যায়।

পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা পুরুষ-নারী নির্বিশেষে যে কারো মধ্যেই থাকতে পারে। ‘পর্বতো বহ্নিমান’ কাহিনিতে শিক্ষিত, আধুনিক নারী শর্মিষ্ঠাও দময়ন্তী মেয়ে হয়ে গোয়েন্দাগিরি করছে বলে তাকে কটাক্ষ করে। এমনকি ‘নীলকান্তপুরের হত্যাকাণ্ড’ কাহিনিতে মাতাল পঙ্কজ রায়চৌধুরী দময়ন্তীর প্রতি অশ্লীল ইঙ্গিত করতেও দ্বিধাবোধ করে না। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই দময়ন্তীকে ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করতে দেখা যায়। পিতৃতান্ত্রিক অবজ্ঞার বিরুদ্ধে সে সরাসরি বাকযুদ্ধে নামে না, বরং রহস্য সমাধান করে তাদের সামনে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ তুলে ধরে।

দময়ন্তী পেশাদার গোয়েন্দা নয়, তাই মিতিনের মতো মক্কেলরা এসে তাকে রহস্য সমাধান করতে বলেন না।  ‘নকল হীরে’ কাহিনিতে সুশীল মৈত্র, ‘ইজ্জত’ কাহিনিতে সমরেশের দাদার বন্ধু অরবিন্দ আচার্য দময়ন্তীর কাছে তদন্তের আর্জি নিয়ে হাজির হয়েছিলেন, কিন্তু বেশির ভাগ কাহিনিতেই দময়ন্তীর কোনও মক্কেল নেই। ‘নীলকান্তপুরের হত্যাকাণ্ড’তে প্রজ্ঞা মনোবিশ্লেষণের অফিস-ইন-চার্জ মদনমোহন কাঞ্জিলাল উলটে দময়ন্তীকে তদন্তের জন্য টাকা দিতে হবে কি না ভেবে অস্থির হয়ে পড়েন। বেশির ভাগ কাহিনিতেই দময়ন্তী সমরেশের বন্ধু পুলিশ ইন্সপেক্টর শিবেনের কথায় তদন্ত করতে শুরু করে। কয়েকটি কাহিনিতে শিবেনের পরিবর্তে দময়ন্তীর সহপাঠী আইপিএস জয়ন্ত চতুর্বেদীকে দেখা যায়।  অর্থাৎ, গোয়েন্দা হওয়ার পরও গোয়েন্দা হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা মূলত ব্যক্তিগত  পরিচয়ের ভিত্তিতেই। ‘চরৈবেতি’ বাদে বাকি ১০টি কাহিনিতেই হত্যারহস্যের সমাধান করেছে দময়ন্তী, কিন্তু প্রতিটা হত্যার ধরন এবং উদ্দেশ্য একেবারেই ভিন্ন।  ‘সূর্যগ্রহণ’-এ একবার তার ওপর আততায়ীর হামলা হলেও দময়ন্তীকে নিজস্ব স্বাচ্ছন্দ‍্যের ঘেরাটোপের বাইরে গিয়ে তদন্ত করতে হয়নি। দময়ন্তীর কাহিনিগুলির সমাধান সম্পূর্ণভাবেই বুদ্ধিনির্ভর। গোয়েন্দাগিরি করার জন্য দময়ন্তীকে প্রজ্ঞাপারমিতার মতো মারামারি কিংবা গার্গীর মতো নিজের জীবনকে সম্পূর্ণ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে রহস্য উন্মোচন করতে দেখা যায় না। বলা যায় দময়ন্তীর কাহিনিগুলি গুণগত মানের দিক থেকে যতটা এগিয়ে, গোয়েন্দা হিসেবে দময়ন্তী ততটা এগোতে পারেনি। ‘সাহিত্য তক্কো’ আয়োজিত একটি ওয়েবিনারে অধ্যাপক নির্মাল্য ঘোষ বলেন, লেখক মনোজ সেন তাঁর মেয়ে গোয়েন্দার নাম দময়ন্তী রাখার পিছনে মূল কারণ পৌরাণিক দময়ন্তীর বুদ্ধিদীপ্ততা। পৌরাণিক দময়ন্তী যেমন স্বয়ংবর সভায় নলের রূপ ধারণ করে থাকা দেবতাদের গলায় মালা না দিয়ে নিজের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে আসল নলকে বরণ করেন, তেমনই গোয়েন্দা দময়ন্তী নিজের বুদ্ধির সাহায্যে আসল অপরাধীকে খুঁজে বের করে। 

          ‘রহস্য সন্ধানী দময়ন্তী ২’-এর ভূমিকায় মনোজ সেন বলেছেন, “বাংলা সাহিত্যে দময়ন্তীর আবির্ভাবের পর গত পঞ্চাশ বছরে আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রচুর পরিবর্তন হয়ে গেছে। মেয়েদের কর্মজীবন শিক্ষা, চিকিৎসা, আইন, অভিনয় প্রভৃতি ব্যবহারিক বিষয় ছাড়িয়ে সেনা, নৌ বা বিমানবাহিনী, পর্বতারোহণ ইত্যাদি শ্রমসাধ্য ও পুরুষদের একচেটিয়া কাজেও চলে এসেছে।... অথচ আজও দময়ন্তীর যুক্তি, বুদ্ধি, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, ঘটনার বিশ্লেষণ ইত্যাদির যে সমাদর রয়েছে সেটা আমার আশাতীত ছিল।” দময়ন্তীর কাহিনির সমাদর অবশ্যই তার কাহিনির গুণগত কারণে। কিন্তু তার পাশাপাশি দময়ন্তীর ঐতিহাসিক গুরুত্বকেও অস্বীকার করা যায় না। মেয়ে গোয়েন্দার কাহিনিগুলি যখন অপরাধীর হাতে বন্দি হওয়া এবং সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে পুলিশ আনা, অথবা ঘরের মধ্যে লুকোনো ঘর আবিষ্কার করে সেখান থেকে গুপ্তধন কিংবা অপহৃত মানুষকে বের করে আনার ছকের মধ্যে অবদ্ধ হয়ে পড়েছিল, তখন মনোজ সেন মেয়ে গোয়েন্দার কাহিনিকে গোয়েন্দাকাহিনির মূল স্রোতের সঙ্গে মিলিয়ে দেন। পাশাপাশি গোয়েন্দার শক্তিনির্ভরতার কাঠামো ভেঙে তিনি যে বিবাহিত ঘরোয়া গোয়েন্দার নির্মাণ করলেন, তাকে পরবর্তী সময়পর্বে নির্মিত  তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গার্গী বা  সুচিত্রা ভট্টাচার্যের মিতিনমাসির পূর্বসূরি বলা যেতে পারে।  


#বাংলা #নিবন্ধ #ডিটেক্ট it #মহিলা গোয়েন্দা #মিতিন মাসি #দময়ন্তী #মনোজ সেন #বসুন্ধরা মন্ডল

Leave a comment

All fields are required. Comment will appear after it is approved.

trending posts

newsletter

Connect With Us

today's visitors

40

Unique Visitors

182035